Skip to main content

বাদামওয়ালা

বাদামওয়ালা

মদম থেকে সন্ধ্যে ৭টায় ট্রেনে ওঠা মানে সে এক প্রতিযোগীতায় উত্তীর্ণ হওয়ার সমান। তার উপর কয়েকজন মহান ব্যক্তি আছেন, যাদের মাহাত্ম্য দেখলে বড় রাগ লাগে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে যাইহোক, বড় কষ্টের সহিত প্রতিযোগীতায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনোক্রমে ট্রেনের উভয় শিটের মাঝ বরাবর এগিয়ে গেলাম জানলার দিকে। সেখানকার শিটে চারজন যেভাবে বসে আছে তার থেকে দাঁড়িয়ে জাওয়া অনেক বেশী আরামদায়ক! গমগমিয়ে ট্রেন ছুটছে, সঙ্গে জনারণ্যের কিচিরমিচির। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফেরাটা বড় বিস্বাদ লাগে! "বাদাম লাগবে… বাদাম" বেশ কর্কশ গলার আওয়াজটা কানে আসল। বেশ মোটাসোটা একজন টাক মাথার বৃদ্ধ। কিছুক্ষণ পরে আবার - "এই বাদাম হবে… ডালমুট হবে…" আমার পাশের একজন একটি ডালমুটের আবেদন করলেন।
সাথে সাথে আরো দু'জন বাদামের আবেদন জানালেন। সেই বাদাম-ডালমুটের সাথে আবার লঙ্কা ফ্রী! বেশ লোভে পড়ে গেলাম। ইতিমধ্যে একটি বসার শিট পেয়ে সাময়িক লোভটাকে পাত্তা দিলাম না। ফোনের ডেটা কানেকশন অন করে হোয়াটস অ্যাপ খুলে বসে রইলাম। হটাৎ-ই সেই কর্কশ গলার আওজটা আবার কানে এল। তেমন ভ্রুক্ষেপ করলাম না। পরে শুনলাম আমার শিটে যে ব্যক্তি আগে বসেছিল, তিনি ওই বাদামওয়ালা কে যেই ১০ টাকার নোট দিয়েছিল সেটা মাঝখান থেকে অনেকটা ছেঁড়া। -"দাদা এই বাদাম বেচে সংসার চালাই। এই ১০ টাকা ইনকাম করা অনেক কষ্টের। আপনারা বুঝবেন কি! ঠাকুর করুক আপনাদের সে অবস্থায় পড়তে না হয়।" ইতিমধ্যে ট্রেন ব্যারাকপুর ঢুকে গেছে। তাড়াহুড়ো করে নেমে যেতে হল। কিন্তু ওই টাকমাথা বৃদ্ধের চোখের কোনে অভিমানের দু'ফোঁটা জল দেখেছিলাম। হয়তো আজ রাতে তার খাওয়ার পরিমান দু'মুঠো কমে যাবে। কিংবা হয়তো এই ১০ টাকার জন্য আজ রাতে তার ঘুমই আসবে না!
©সুরোজিৎ ঘোষ
Facebook 
Twitter 
Instagram 
youtube

Comments

Popular posts from this blog

আমরা গরিব তাই

|| আমরা গরীব তাই || আমরা গরীব তাই মেনে নিতে হয়,। কাজ করে খেতে হবে ― মেধা পড়ে রয়; জীবন অভাবে ভরা, কিছু আয় চাই, কলেজে তাই আর পড়া হয় নাই। সকালেতে মাঠে যাই, বিকেলেতে দুঃখ, আগামীকাল ভাবার পরে চেহারাটা রুক্ষ। বুক ভরা স্বপ্ন, সফলতা পাব ঠিক! ― এই আশাতে বাঁচি, রুপকথার নিরিখ। বুকে বল মুখে হাসি, ভেতরটা পুড়ে ছাই, কিছুই করার নেই, আমরা গরীব তাই।। © সুরোজিৎ অবসাদে অবসর কাটানোর থেকে, কবিতা লেখাই ভালো।

প্রেমিকেরা অপেক্ষায় থাকে

প্রেমিকেরা অপেক্ষায় থাকে, বাগানবাড়ির সামনে তোমায় প্রথম দেখেছি, প্রেমে পড়েছি আরও অনেক পরে; তোমার রুপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি আমি, যেমন গাছেরা মাটিকে আঁকড়ে ধরে। ঠিক কত বছর পার হয়ে যায়— খেয়াল থাকে না, অপেক্ষা থাকে! বাগান বাড়ির রাস্তা একা থেকে যায়; প্রেমিক খুঁজতে থাকে নতুন বৈশাখ। প্রশান্ত যেটুকু সময় ছিল— গোধুলী-বেলার লালচে আকাশ জুড়ে, কালবৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হতে থাকে, প্রেমিক এখনও অপেক্ষায় গঙ্গা নদীর তীরে।

প্রেম-পর্দা

প্রেম- পর্দা সুরোজিৎ ঘোষ প্রথম  পরিচ্ছেদ   উন্মুক্ত আকাশের ষোলোআনাই কালো মেঘে ঢাকা পরে গেছে। সূর্যালোকের চিহ্নমাত্র নেই। এ যেন মধ্যাহ্নের পরিবর্তে অনাবশ্যক এক সন্ধ্যার আগমন। সুজাতা শয়ন কক্ষে শায়িতা । ওর সতেজ মন আংশিকভাবে বিলিন হয়ে গেছে পাড়ার ছেলে সুনীলের সন্ধানে। ওর মনকক্ষেও অপ্রাকৃতিক ঝোড়ো হাওয়ার ডামাডোল চলছে। শিহরিয়া হয়ে মাঝেমাঝে ও নরম কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরছে। আজ ও সুনীলের বক্ষে মিলিয়ে যেতে চায় নির্দ্ধিধায়। সমস্ত গন্ডি পার করে মনের সংকীর্ণতাকে পাত্তা না দিয়ে খোলা মাঠে ভিজতে চায়, ভেজা সবুজাভ ঘাসে পা ফেলে সুনীলের স্পর্শ অনুভব করতে চায়, সমস্ত কিছু উজাড় করে আত্মনিয়োগ করতে চায় অযৌক্তিক এক সংযমে। কালো আকাশের নীচে-সবুজ ঘাসের ফাঁকে-নীল নদীর তীরে সুজাতা শুধু সুনীলকেই চায়। এই জীবনে-এই রুপে-এই যৌবনে শুধু সুনীলেরই অধিকার। যেন আজ বাতাসে বাতাসে প্রেমের বিষাক্ত কোনো ভাইরাস মিশে গেছে, যেটার প্রভাবে হয়তো সুজাতার যৌন উদ্দীপনা মাত্রা ছাড়িয়েছে!      আসলে আজকের আবহাওয়াটাই এমন। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে গেল। আর বর্ষার আবহাওয়া মানেই রোমান্সের চরম সময়। য...