Skip to main content

নিমন্ত্রণ ও ভয়ানক রাত

নিমন্ত্রণ ও ভয়ানক রাত

~ সুরোজিৎ ঘোষ

  রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর পর্ণোদের বাড়ি থেকে বেরোতে অনেক লেট হয়ে গেল। সুনীতা আর পর্ণো'র চক্করে আজ বাড়িতে রণক্ষেত্র বাঁধবে। ইতিমধ্যেই পায়েল ১২ বার কল করে ফেলেছে। পর্ণোদের সঙ্গে হটাৎ স্টেশনে দেখা হয়ে গেছিল। ওরা কি কি সব শপিং করে ফিরছিল, আর আমি ফিরছিলাম অফিস থেকে। সুনীতার সঙ্গে প্রায় ২ বছর পর দেখা, খুব আগ্রহের সঙ্গে বেশ ক্ষানিকটা সময় স্টেশনেই গল্প করে ফিরতে যাব— এরকম সময় পর্ণোর দাবী আজ রাতে ওদের বাড়ি যেতেই হবে! অনেক বুঝিয়েও পারা গেল না।  সন্ধ্যে ৭ টা বাজে তখন, আমাকে ৯টার মধ্যে ছেড়ে দেবে এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে অবশেষে রাজি হলাম।


 সুনীতার সাথে আমার পরিচয় হয় কলেজে, প্রথমের দিকে তেমন একটা কথা বার্তা না হলেও শেষের দিকে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল দারুন গাঢ়। তারপর কলেজের শেষে কে-কোথায়-কিভাবে ছড়িয়ে গেল!

তারপর বছর কিছু পর, কাজের খোঁজ করতে-করতে একদিন আবার হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সুনীতার সাথে, সঙ্গে ছিল পর্ণো। আগামী মাসে ওদের বিয়ে। আমাকে আমন্ত্রণ আর থ্রেট দু'টোই এক সাথে করেছিল। যদিও ওদের বিয়েতে আর যাওয়া হয়নি আমার।


  অনেকদিন পর রাতে ৪ পেগ খেয়েছি। মানে জোর করে খাইয়েছে বললে সঠিক বলা হবে। পায়েল খুব অপছন্দ করে। সব মিলিয়ে আজ যে কপালে কি আছে! 

আপাতত রাত ১১টা ১৫, ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে শীতল বাতাস। নেশা জেটুকু হয়েছিল পায়েলের আগাম ভয়ঙ্কর রুপের কথা ভেবেই তা কেটে গেছে। ১ বছর হয়েছে আমাদের বিবাহ। প্রেম করেই। ২ বছর প্রেম তারপর বিয়ে। প্রথম প্রথম রাগ করার অধিকার ছিল শুধু আমার। আজ তার ক্ষুদ্রতম অংশ-ও নেই! প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়িই ফিরবনা, তবে সমস্যা আরও জটিল হবে, অগ্যতা নেড়া চলল বেলতলার দিকেই।


  অনেকটা হেঁটে আসার পরও কোনো অটো-টোটো না পেয়ে বড় হতাশ হলাম। এই শহরের কি হল! সবে রাত সারে ১১ টা মাত্র। হুহ্, এই দূর্যোগের রাতে, আমার মত লোকের বড়ই অভাব, কাজেই অটো-টোটো পাওয়ার কোনো আশাই আর নেই। পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে ১ ঘন্টা লাগবে বোধকরি। একা একা যেতে যেতে মনে হতে লাগল এই এদের সাথে আজ দেখা না হলেই ভালো হতো! মিনিট ২০ হাঁটার পর বৃষ্টিটা বড্ড জোরালো ভাবে নেমেছে, সাথে এলোমেলো হাওয়া, ছাতি আর পারবে না। কিছুক্ষন অপেক্ষা করা শ্রেয় মনে করে একটা বড় গাছের নীচে আশ্রয় নিচ্ছিলাম। ইতিমধ্যে মেডামের ফোন—

“কোথায় তুমি?”

—“এই তো রাস্তায়, অটো পাইনি, হেঁটে ফিরছি আর আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।”

—“আচ্ছা, সাবধানে এসো, আমি কি কিছুটা এগিয়ে যাবো?”

—“একদম না পায়েল, অনেক রাত হতেছে, তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি, দুশ্চিন্তার কিচ্ছু নেই।”

—“ঠিকাছে, সাবধানে এসো।”

ফোনটা কেটে বুঝলাম রাতের অশান্তির মেঘ কেটেছে। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আবার এগোতে গিয়ে নাকে এক তীব্র গন্ধ প্রবেশ করল। খারাপ না বরং ভালোই, কিন্তু গন্ধের তীব্রতায় মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। বেশ ঘাবড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি এগোলাম বাড়ির দিকে। এবার অন্য এক বিপদ, হটাৎ কানে এলো এক মহিলার কান্না'র শব্দ। প্রচন্ড বেদনায় মানুষ এরকম কাঁদে। এটা আদেও কোনো মানুষ নাকি অন্যকিছু? গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। বেশ শীত-শীত করছে। একটা সিগারেটে ধরিয়ে প্রায় ছুটতে লাগলাম।

  আপাতত বাড়ির কাছে এসে গেছি, সেই তীব্র গন্ধ আর নেই, কান্নার আওয়াজও মিলিয়ে গেছে কোথাও। উফ্! শান্তি!

পায়েল কে ফোন করলাম—

“এসে গেছি, দরজাটা খোলো।”

—“খুলছি, ১ সেকেণ্ড!”

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পায়েল এসে দরজা খুলে দিল। ওর মুখে আপাতত চিন্তা আর রাগ মেশা ছাপ।

—“ইশ! একদম ভিজে গেছ যে!”

পায়েল'কে অনেকদিন পর আমাকে নিয়ে চিন্তিত হতে দেখলাম। মৃদু আলোয় ওকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, মায়াবীও দেখাচ্ছে।

—“আরে হা করে কি দেখছ? একদম ভিজে গেছ, একেবারে স্নান করে এসো, আমি খাবার বাড়ছি।”

পেটে খিদে একদম নেই, তাও ওকে বলতে পারলাম না।

যে সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে আমার জন্যে, তাকে সত্যিটা না বলতে পারায় আমার বড্ড অস্বস্তি শুরু হল। আর রাস্তার অদ্ভুতুড়ে গল্পের কথা তো বলাই যাবে না। পায়েল সারাদিন বাড়িতে একা থাকে।

 আর কখনও এরকম হটাৎ আমন্ত্রণ গ্রহন করবই না! প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম নিজের কাছেই! 🙉

Comments

Subhajit said…
আমি যদি তোকে দেখতে পাই তো তুলে নিয়ে যাবো😂...আর লেখা খুব ভালো হয়েছে❣️
Surojit Ghosh said…
Haha! Thanks for your compliment.

Popular posts from this blog

আমরা গরিব তাই

|| আমরা গরীব তাই || আমরা গরীব তাই মেনে নিতে হয়,। কাজ করে খেতে হবে ― মেধা পড়ে রয়; জীবন অভাবে ভরা, কিছু আয় চাই, কলেজে তাই আর পড়া হয় নাই। সকালেতে মাঠে যাই, বিকেলেতে দুঃখ, আগামীকাল ভাবার পরে চেহারাটা রুক্ষ। বুক ভরা স্বপ্ন, সফলতা পাব ঠিক! ― এই আশাতে বাঁচি, রুপকথার নিরিখ। বুকে বল মুখে হাসি, ভেতরটা পুড়ে ছাই, কিছুই করার নেই, আমরা গরীব তাই।। © সুরোজিৎ অবসাদে অবসর কাটানোর থেকে, কবিতা লেখাই ভালো।

প্রেমিকেরা অপেক্ষায় থাকে

প্রেমিকেরা অপেক্ষায় থাকে, বাগানবাড়ির সামনে তোমায় প্রথম দেখেছি, প্রেমে পড়েছি আরও অনেক পরে; তোমার রুপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি আমি, যেমন গাছেরা মাটিকে আঁকড়ে ধরে। ঠিক কত বছর পার হয়ে যায়— খেয়াল থাকে না, অপেক্ষা থাকে! বাগান বাড়ির রাস্তা একা থেকে যায়; প্রেমিক খুঁজতে থাকে নতুন বৈশাখ। প্রশান্ত যেটুকু সময় ছিল— গোধুলী-বেলার লালচে আকাশ জুড়ে, কালবৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হতে থাকে, প্রেমিক এখনও অপেক্ষায় গঙ্গা নদীর তীরে।

প্রেম-পর্দা

প্রেম- পর্দা সুরোজিৎ ঘোষ প্রথম  পরিচ্ছেদ   উন্মুক্ত আকাশের ষোলোআনাই কালো মেঘে ঢাকা পরে গেছে। সূর্যালোকের চিহ্নমাত্র নেই। এ যেন মধ্যাহ্নের পরিবর্তে অনাবশ্যক এক সন্ধ্যার আগমন। সুজাতা শয়ন কক্ষে শায়িতা । ওর সতেজ মন আংশিকভাবে বিলিন হয়ে গেছে পাড়ার ছেলে সুনীলের সন্ধানে। ওর মনকক্ষেও অপ্রাকৃতিক ঝোড়ো হাওয়ার ডামাডোল চলছে। শিহরিয়া হয়ে মাঝেমাঝে ও নরম কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরছে। আজ ও সুনীলের বক্ষে মিলিয়ে যেতে চায় নির্দ্ধিধায়। সমস্ত গন্ডি পার করে মনের সংকীর্ণতাকে পাত্তা না দিয়ে খোলা মাঠে ভিজতে চায়, ভেজা সবুজাভ ঘাসে পা ফেলে সুনীলের স্পর্শ অনুভব করতে চায়, সমস্ত কিছু উজাড় করে আত্মনিয়োগ করতে চায় অযৌক্তিক এক সংযমে। কালো আকাশের নীচে-সবুজ ঘাসের ফাঁকে-নীল নদীর তীরে সুজাতা শুধু সুনীলকেই চায়। এই জীবনে-এই রুপে-এই যৌবনে শুধু সুনীলেরই অধিকার। যেন আজ বাতাসে বাতাসে প্রেমের বিষাক্ত কোনো ভাইরাস মিশে গেছে, যেটার প্রভাবে হয়তো সুজাতার যৌন উদ্দীপনা মাত্রা ছাড়িয়েছে!      আসলে আজকের আবহাওয়াটাই এমন। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে গেল। আর বর্ষার আবহাওয়া মানেই রোমান্সের চরম সময়। য...