Skip to main content

Posts

প্রেম-পর্দা

প্রেম- পর্দা সুরোজিৎ ঘোষ প্রথম  পরিচ্ছেদ   উন্মুক্ত আকাশের ষোলোআনাই কালো মেঘে ঢাকা পরে গেছে। সূর্যালোকের চিহ্নমাত্র নেই। এ যেন মধ্যাহ্নের পরিবর্তে অনাবশ্যক এক সন্ধ্যার আগমন। সুজাতা শয়ন কক্ষে শায়িতা । ওর সতেজ মন আংশিকভাবে বিলিন হয়ে গেছে পাড়ার ছেলে সুনীলের সন্ধানে। ওর মনকক্ষেও অপ্রাকৃতিক ঝোড়ো হাওয়ার ডামাডোল চলছে। শিহরিয়া হয়ে মাঝেমাঝে ও নরম কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরছে। আজ ও সুনীলের বক্ষে মিলিয়ে যেতে চায় নির্দ্ধিধায়। সমস্ত গন্ডি পার করে মনের সংকীর্ণতাকে পাত্তা না দিয়ে খোলা মাঠে ভিজতে চায়, ভেজা সবুজাভ ঘাসে পা ফেলে সুনীলের স্পর্শ অনুভব করতে চায়, সমস্ত কিছু উজাড় করে আত্মনিয়োগ করতে চায় অযৌক্তিক এক সংযমে। কালো আকাশের নীচে-সবুজ ঘাসের ফাঁকে-নীল নদীর তীরে সুজাতা শুধু সুনীলকেই চায়। এই জীবনে-এই রুপে-এই যৌবনে শুধু সুনীলেরই অধিকার। যেন আজ বাতাসে বাতাসে প্রেমের বিষাক্ত কোনো ভাইরাস মিশে গেছে, যেটার প্রভাবে হয়তো সুজাতার যৌন উদ্দীপনা মাত্রা ছাড়িয়েছে!      আসলে আজকের আবহাওয়াটাই এমন। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে গেল। আর বর্ষার আবহাওয়া মানেই রোমান্সের চরম সময়। য...

এপ্রিল ফুল

০১/০৪/২০১৬ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর ২টো ৪৫, প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বাইপাশের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কোনোদিন তো এত অপেক্ষা করতে হয়নি। তবে আজ কী কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হল নাকি! -ভেবে আমি প্যান্টের ডান পকেটে হাত ঢুকালাম। —"একী মোবাইলটা পকেটে নেই! গেল কোথায়?" হম্বি-তম্বি করে সবকটা পকেটই দেখলাম, ফোনটা হারিয়েছে। ইতিমধ্যে বাইকের ডিকি থেকে একটা গোঁ-গোঁ শব্দ পেলাম। খুলে দেখি মোবাইলটা ডিকিতেই। —"Ohhhhhh…… Thank God! আজ মোবাইলটা ধোকা দিয়ে দিচ্ছিল একদম।" ওখানে পর্নার পাঠানো একটা SMS দেখলাম। —"please never try to meet with me from today. Our relationship has been destroyed. I hate U & Never try to call me. good bye forever ~ Parna" ব্যাপারটা বুঝলাম না। পর্নাকে একটা ফোন করলাম। তখন বিশ্বাস হল, যখন ও রিসিভ করে বলল - "U chitter" ব্যাস এইটুকুই। তার পর সুইচড অফ। ০২/০৪/১৬ —“কাকিমা সুনীল কোথায়? কাল রাত থেকে কতবার ফোন করলাম রিসিভই করল না।” ইতিমধ্যে দেখলাম ওদের অনেক লোকজন। ওর মা কান্নায় ভেঙে পড়ল। বলল, —“সে আর নেই!" আমি ঘরে গিয়ে দেখলাম ওর সুগঠিত দেহটা বিছানায় এলিয়ে...

মুস্কান

ছো টোবেলা থেকে আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি মুস্কান-এর। জন্ম দিয়ে বাবা পালিয়েছে। বাড়ী নেই, আপনজন বলতেও কেউ নেই। আছে কেবল তার নিজের জীবনটা। মুস্কানের কলকাতার রাস্তায় ভিক্ষা করে দিন কেটে যায়। আর যখন রাস্তার পাশ থেকে বড় বড় গাড়ি যায়, তখন ওর মনে মনে কাল্পনিক একটা ইচ্ছা জন্মায় গাড়ি চরবার। ৩১/০৩/১৬ হ্যাঁ আজ ওর ইচ্ছা পুর্ণ হল। মানে আজ মুস্কান একেবারে এ.সি গাড়ি চড়ল। ওই দুপুর ১২:৪০ নাগাদ। আর ওর গন্তব্যস্থল ছিল কোলকাতা মেডিকেল কলেজ। সব থেকে বড় কথা আজ মুখ্যমন্ত্রীরর সাথেও মুস্কানের দেখা হল। এসব কিছুই হত না যদি আজ বিবেকানন্দ সেতু না ভেঙে পড়ত।

সময়

|| সময় || বড় দুরূহ এ বাস্তব শিরোধার্য করিতে ডরি, শাসনভার যার উপর, কেমনে বিরোধীতা করি! তৃণসম ক্ষীণ আমি এদেশ দুর্বলতাময়, ঝলি ওঠে ন্যায়ের দন্ড এথায় শুধু অসৎ কার্য হয়। সত্য বলিলে বন্দি হব, তৃণসম ক্ষীণ আমি বিচারের স্রোতে রক্ত, চিত্ত আজিকে ভয়পূর্ন অত্যাচারের ভয়, শিক্ষিত তবে বিচারবুদ্ধিহীন, তৃণসম ক্ষীণ আমি ভুলেও আর সত্য কথা নয়। বিধাতাই একমাত্র পথ, আমি শিরদাঁড়াহীন আজ বিচারবুদ্ধিহীন নই, তৃণসম ক্ষীণ আমি সত্যিই কী আমি ক্ষীণ? আমি সাহসী-বীর ছেলে তৃণসম ক্ষীণ তুমি? কর্মোৎসাহী হও সব, তৃণসম ক্ষীণ আমি? পুনর্জাগরণ কই? চলো নিদ্রাভঙ্গ করি একীভূত হয়ে বলি, নইলে সত্যের পথে চলি।

রঙ বদলানো

জীবন বিষে বিষণ্ণ, মরনেও কোথা সুখ ভেজা-ভেজা চোখ। অরাজকতার বাতাবরণে সময় হয়তো আছে, সময়ের সাথে রঙ বদলায় কিংবা হয়তো নেই, নতুন মুখোশ কই। সবই সময়সাপেক্ষে স্রোতহীন নদীর হাঙর নাকি হাটু জলের ব্যাঙ! বদলে ফেলে রঙ।

বাদামওয়ালা

বাদামওয়ালা দ মদম থেকে সন্ধ্যে ৭টায় ট্রেনে ওঠা মানে সে এক প্রতিযোগীতায় উত্তীর্ণ হওয়ার সমান। তার উপর কয়েকজন মহান ব্যক্তি আছেন, যাদের মাহাত্ম্য দেখলে বড় রাগ লাগে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে যাইহোক, বড় কষ্টের সহিত প্রতিযোগীতায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনোক্রমে ট্রেনের উভয় শিটের মাঝ বরাবর এগিয়ে গেলাম জানলার দিকে। সেখানকার শিটে চারজন যেভাবে বসে আছে তার থেকে দাঁড়িয়ে জাওয়া অনেক বেশী আরামদায়ক! গমগমিয়ে ট্রেন ছুটছে, সঙ্গে জনারণ্যের কিচিরমিচির। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফেরাটা বড় বিস্বাদ লাগে! "বাদাম লাগবে… বাদাম" বেশ কর্কশ গলার আওয়াজটা কানে আসল। বেশ মোটাসোটা একজন টাক মাথার বৃদ্ধ। কিছুক্ষণ পরে আবার - "এই বাদাম হবে… ডালমুট হবে…" আমার পাশের একজন একটি ডালমুটের আবেদন করলেন। সাথে সাথে আরো দু'জন বাদামের আবেদন জানালেন। সেই বাদাম-ডালমুটের সাথে আবার লঙ্কা ফ্রী! বেশ লোভে পড়ে গেলাম। ইতিমধ্যে একটি বসার শিট পেয়ে সাময়িক লোভটাকে পাত্তা দিলাম না। ফোনের ডেটা কানেকশন অন করে হোয়াটস অ্যাপ খুলে বসে রইলাম। হটাৎ-ই সেই কর্কশ গলার আওজটা আবার কানে এল। তেমন ...

একটি স্নিগ্ধ দুপুর

মা ঘের দুপুর, সকালের রোদের থেকেও বেশি মিষ্টি দুপুরের পড়ন্ত রোদ। কাজেই মধ্যাহ্নভোজন আত্মসাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম রোদ্দুরে গা'ভেজাতে। কয়েকটুকরো রৌদ্রসেবন করে একাকীত্ব বোধ হতে থাকল, কবিতা লেখার মত কঠিন কাজে আর মন বসে না। সুতরাং কঠিন যা কিছু তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সহজের দিকে পা বাড়ালাম। যেমন কুয়াশা-নীলাভ আকাশের নীচে সমতল গঙ্গা, ঝিরি ঝিরি বাতাসের শীতলতা, গাছের পাতাদের সড়সড় শব্দ, ছায়ার অভিমুখী কল্পনা, দিগন্তের আবছা চিত্রপট আরো কতকিছু। রৌদ্রে চিকচিক করা জলরাশি দেখে কিছুক্ষণ আগের স্নানাগারে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত গানের কথা মনে পড়ে যায়, গায়ে জল ঢালার আগের মুহূর্তের কথা মনে পড়লে আর তাকানো যায় না সেই দিকে! দূরের গাছপালারা যেন কুয়াশা মেখেছে আর নিশ্চই বাতাসে মিশেছে নেশার কোনোএক উপকরণ!     বাড়ি ফেরার পথে হটাৎ আনমনা হয়ে পড়ি, দুপুরের ভাতঘুম অপেক্ষা প্রকৃতি দর্শনে আজ যে আকর্ষণ অনুভূত হল, সেই স্মৃতি নিয়ে বেশ কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেওয়া অনেক বেশি সহজ।

আমরা একটু অন্যরকম

|| আমরা একটু অন্যরকম || বন্ধু হল মনের মানুষ মনের কথা বেফাঁস হোক, ওই হাতেতে হাতটি রেখে কাটিয়ে দেব কষ্ট-শোক। বন্ধু হল আরেকটি প্রাণ আড্ডা গল্পে কাটুক দিন, বন্ধু তোকে চাইছি পাশে বাড়ছে, তবে বাড়ুক ঋণ। একটা বয়স পার হয়ে যায় যখন, ব্যস্ততাতে মন জখম, আমন্ত্রণের অপেক্ষা শেষ, আমরা একটু অন্যরকম। © সুরোজিৎ বন্ধুত্বটা এগিয়ে যাক, অসীম অন্তিমকাল পর্যন্ত! www.facebook.com/mrsurojitghosh

আমরা গরিব তাই

|| আমরা গরীব তাই || আমরা গরীব তাই মেনে নিতে হয়,। কাজ করে খেতে হবে ― মেধা পড়ে রয়; জীবন অভাবে ভরা, কিছু আয় চাই, কলেজে তাই আর পড়া হয় নাই। সকালেতে মাঠে যাই, বিকেলেতে দুঃখ, আগামীকাল ভাবার পরে চেহারাটা রুক্ষ। বুক ভরা স্বপ্ন, সফলতা পাব ঠিক! ― এই আশাতে বাঁচি, রুপকথার নিরিখ। বুকে বল মুখে হাসি, ভেতরটা পুড়ে ছাই, কিছুই করার নেই, আমরা গরীব তাই।। © সুরোজিৎ অবসাদে অবসর কাটানোর থেকে, কবিতা লেখাই ভালো।